মাথার চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
পেইজ সূচিপত্রঃ
অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিনের অভাবেও চুল পড়তে পারে।এছাড়াও কিছু কিছু ঔষধের
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও চুল পড়ে থাকতে পারে। তাই সবার প্রতিদিন কিছু না
কিছু চুল হারায়। গড়ে মানুষ প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ১০০ টি চুল হারায়। এর
চেয়ে বেশি চুল পড়লে সেটা সমস্যায় ধরে নিতে হবে। আজকের বিশ্বের সবচাইতে
প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের একটি বিশদ আলোচনা করা যাক কিভাবে চুল
পড়া রোধ করা যায় আজকে এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
সাধারণত কমবেশি সবারই মাথার চুল পড়ে যদি এই চুল পড়া অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখনই হয় সমস্যা। আমরা অনেকেই জানিনা কেন চুল বেশি পড়ে এর জন্য কে দায়। মাথার চুল পড়ার জন্য এক একজন এক এক জিনিস কে দায়ী করেন, যেমন কেউ পানি, কেউ খাবার, কেউ তেলের দোষ দিয়ে থাকেন।এর জন্য দায়ী হলো এন্ড্রোজেনিক নামক হরমোন। মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পরা আর পুরুষের টাক মাথার জন্য দায়ী হলো এই এন্ড্রোজেনিক নামক হরমোন। বিশেষ করে মেয়েদের মেনোপজের আগে বা পরে এই হরমোন অতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং এজন্য মেয়েদের অনেক চুল পড়ে।
মাথার চুল অতিরিক্ত কেন পরে
সাধারণত কমবেশি সবারই মাথার চুল পড়ে যদি এই চুল পড়া অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখনই হয় সমস্যা। আমরা অনেকেই জানিনা কেন চুল বেশি পড়ে এর জন্য কে দায়। মাথার চুল পড়ার জন্য এক একজন এক এক জিনিস কে দায়ী করেন, যেমন কেউ পানি, কেউ খাবার, কেউ তেলের দোষ দিয়ে থাকেন।এর জন্য দায়ী হলো এন্ড্রোজেনিক নামক হরমোন। মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পরা আর পুরুষের টাক মাথার জন্য দায়ী হলো এই এন্ড্রোজেনিক নামক হরমোন। বিশেষ করে মেয়েদের মেনোপজের আগে বা পরে এই হরমোন অতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং এজন্য মেয়েদের অনেক চুল পড়ে।
যাদের বয়স ৪০ প্লাস তাদের বেশি চুল পড়ে। যারা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ যেসব
ওষুধ আছে ওষুধগুলি গ্রহণ করেন তাদেরও চুল পড়ে। যারা চুলের কালার ব্যবহার করেন
বা অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তাদের চুল পড়া স্বাভাবিক। যাদের
ডায়াবেটিকস আছে বা উচ্চ রক্ত চাপ আছে তাদের অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। অনেক
সময় ভিটামিন ও মানসিক চাপের জন্য অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। জেনেটিক কারণে চুল
পড়া একটি সাধারণ ব্যাপার হতে পারে।পারিবারিক ইতিহাস থাকলে চুল পড়ার প্রবণতা
বেশি হতে পারে। অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং যেমন হেয়ার ড্রায়ার স্ট্রেটনার চুলের
ক্ষতি করে। বিভিন্ন পুষ্টির অভাবে চুল পড়তে পারে, যেমন আয়রনের অভাবে শরীরের
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, যা রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত করতে পারে এবং এতে
চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। ভিটামিন ডি, বি 7 বায়োটিন এবং জিংকের অভাবে চুলের
শিখর দুর্বল করে দেয়।
যে ভুলে মাথার চুল পড়ে
- সময়ের অভাবে নিয়মিত চুল আঁচড়ানোর কথা ভুলে যায় অনেকে। প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ মিনিট চুল ভালোভাবে আ্ঁচরানো দরকার। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল বাড়ে। চুলের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকে।
- যাদের চুল লম্বা তারা ঘুমানোর আগে চুল বেঁধে না ঘুমালে আগা ফেটে ভাঙতে শুরু করে।
- নিয়মিত পরিষ্কার না করা ও অতিরিক্ত খুশকির কারণেও চুল পড়বে।
- জন্ডিস, জ্বর, টাইফয়েড বা অন্যান্য তীব্র জ্বরের পরও অনেকের চুল পড়ে। করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও দেখা গেছে অনেকের চুল পড়ে যাচ্ছে।
- চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে অতিরিক্ত ব্লিসিং ও ডাই চুলের ক্ষতি করে।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ধূমপান, ও ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েট ও চুল পড়ার বড় কারণ।
- অতিরিক্ত কাজের চাপে ও চুল পড়ে।
- থাইরয়েডিজমের ফলে চুল পড়তে পারে শরীরের হরমোনের পরিমাণ কম বেশি হলে চুল উঠবে।
- আমরা অনেকেই ভেজা চুল অবস্থায় চুল আঁচড়ান।চুল যখন ভেজা থাকে তখন চুলের গোড়া নরম থাকে তাই ওই অবস্থায় আঁচড়ালে চুল পড়বে।
- অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণও এজন্য দায়ী।
- রক্ত শূন্যতা,পুষ্টিহীনতার কারণেও চুল পড়ে।
- নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন বেড়ে গিয়েও চুল পড়া শুরু হয়। পুরুষের মাথায় টাক পড়ার কারণ ও হরমোনের আধিক্য রয়েছে।
- স্কালপে ছত্রাকের সংক্রমণে চুল পড়ে।
- বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন,প্রোটিন,আয়রনের অভাব।
মাথার অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
মাথার অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ে সবাই চিন্তায় থাকেন। এই চিন্তা বিশেষ করে
মেয়েদের একটু বেশি কারণ, মেয়েদের সুন্দর লাগে এই চুলের কারণে। মেয়েদের
সুন্দর চুল লাগে লম্বা চুলে আর তখন আর তখনই হয় টেনশন যখন চুল পড়া শুরু করে।
আর এই অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ে আমরা অনেক কিছুই করে থাকি, কিন্তু এর প্রকৃত
সমাধান না জানার কারণে, আমরা এমন কিছু চলে ব্যবহার করে থাকি যার ফলে আমাদের চুল
পড়া বন্ধ হয় না বরং আরো চুল পড়া বেড়ে যায়।
আমাদের চুল পড়া বন্ধ করতে হলে আগে জানতে হবে এর জন্য দায়ী কে, হরমনের জন্য
আসলে আমাদের অতিরিক্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমরা বাসায়
কিছু হেয়ার প্যাক বানাতে পারি, যেমন অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। ডিম ও
মধুর মাস্ক- একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে দুই চামচ মধুর মিশিয়ে চুলে লাগালে এবং
২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন এটি চলে শক্তি এবং স্বাস্থ্য বাড়ায়।
মাথার চুল পড়া বন্ধ করা জন্য যেসব তেলের ব্যবহার করতে পারে
মাথার চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমরা অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি কিন্তু
আমরা জানি না এমন কিছু সাধারন তেল আছে যা ব্যবহার করলে মাথার চুল পড়া বন্ধ
হয়ে যাবে। নারিকেল তেল চুলের শিকড়ে নারিকেল তেল মেসেজ করলে চুলের শিকর
শক্তিশালী হয় ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়। অলিভ অয়েল চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে এবং
শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে ফলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হবে।
আরগান ওয়েল চুলের ক্ষয় রোধ করে এবং মিশ্রণতা বাড়াতে সাহায্য করে। উপরোক্ত
তেল গুলি ব্যবহার করলে ছেলে-মেয়ে সবারই মাথার চুল পড়া বন্ধ হতে সহায়তা করবে।
মাথার চুল পড়া বন্ধ করতে যে সকল ভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন
মাথার চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমরা অনেক ভিটামিন না জেনে না বুঝে খেয়ে
থাকি, কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে কোন ভিটামিন টা চুলের জন্য খাব আর কোনটা
খাব না। মাথার চুল পড়া বন্ধ করার জন্য সবথেকে উপকারী ভিটামিন হলো ভিটামিন ই,
এবং এ, একটি গবেষণায় দেখা গেছে মাথার চুলে যত্নে এবং চুল পড়া বন্ধ করার জন্য
ভিটামিন ই সব থেকে কার্যকরী। আপনি যদি ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খান বা ভিটামিন ই
এ জাতীয় ক্যাপসুল ব্যবহার করেন তাহলে এটি ফলে আপনার চুলের উজ্জ্বল ও আপনার চুল
হয়ে যাবে ঘন ও লম্বা।
মাথার চুল পড়া বন্ধ করার প্যাক
আমরা মাথার চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কত কিছুই না করে থাকি, কখনো তেল
কখনো ভিটামিন কখনো খনিজ কখনো প্যাক,কিন্তু সঠিক প্যাক কোনটা এবং এর ব্যবহারের
নিয়ম আমরা কিছুই জানি না। আজকে আমরা জেনে নেই মাথার চুল পড়া বন্ধ করার আসল
প্যাক কোনটি। এবং আমরা ঘরে বসে যেভাবে বানাতে পারি ।
1. ডিম এবং মধুর হেয়ার প্যাক
একটি ডিমের সাদা অংশ দুই চামচ মধু এক চা চামচ অলিভ অয়েল । এইসব
উপাদান গুলি মিশে একটি পেস্ট তৈরি করুন। চুলের গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত লাগান
এবং ২০-২৫ মিনিট রেখে দেন এরপর ঠান্ডা পানি এবং মাইন্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। ডিমের প্রোটিন চুলের শিকড় মজবুত করে এবং মধুর চুলকে নরম উজ্জ্বল
করে।
2. মেথি এবং দই এর হেয়ার প্যাক
দুই তিন
চামচ মেথি বীজ, ২ চামচ দই নিন। মেথিবীজ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন
এটিকে পেস্ট তৈরি করে দইয়ের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০ মিনিটে রেখে ঠান্ডা
পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
3. অ্যালোভেরা এবং নারিকেল তেলের হেয়ার প্যাক
দুই চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক চামচ নারিকেলের তেল নিন।
অ্যালোভেরা জেল এবং নারিকেলের তেল ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে মেসেজ করুন। এক
ঘন্টা পরে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
4. দই এবং নিম প্যাক
দুই চামচ দই, এক চামচ নিমপাতা গুড়া নিন।দই এবং নিম পাতার গুড়া
মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং চুলে লাগান। ৩০ মিনিট পরে হালকা শ্যাম্পু
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিমপাতা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী সমৃদ্ধ যা মাথার
ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে এবং দই চুলকে নরম ও মিশ্রণ করে। এই হেয়ার
প্যাকগুলি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেকটাই কমানো সম্ভব এবং চুলের
স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। চুলের প্রকৃতি অনুযায়ী একটি বা একাধিক ব্যাগ
ব্যবহার করতে পারেন।
মাথার চুল পড়া বন্ধের শ্যাম্পু
মাথার চুল পড়া বন্ধ করার জন্য শ্যাম্পু হিসেবে বাজারে রয়েছে, বিভিন্ন
ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু কিন্তু আজ আমরা জেনে নেব এর মধ্যে কিছু ভালো শ্যাম্পুর
নাম। সানসিল্ক শ্যাম্পুর মধ্যে জনপ্রিয় হিজাব শ্যাম্পু ,পেন্টিন শ্যাম্পুর
মধ্যে রয়েছে এন্টি হেয়ার ফল প্যান্টিন শ্যাম্পু। এক্স স্টুডিও শ্যাম্পু,
ভাটিকা শ্যাম্পু, উপরোক্ত শ্যাম্পু গুলি ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেক অংশই কমে
যেতে পারে।
আরো পড়ুন
ফুসফুসের সমস্যার লক্ষণ কি কি
মাথার চুল পড়া বন্ধ করার খাবার
আমাদের মাথার চুল পড়া শুরু হলে, আমরা অনেকটা পাগলের মত হয়ে খুঁজতে
থাকি, কি ব্যবহার করলে বা কি খেলে মাথার চুল পড়া বন্ধ হবে ।এজন্য আমরা নানান
খাবার খেয়ে থাকি কিন্তু আজ জানবো চুল পড়া বন্ধ করার কিছু খাবারের নাম। যেমন
প্রোটিনযুক্ত খাবারের মধ্যে- মাছ, মুরগি মাংস, ডিম, বাদাম এবং শাকসবজি আপনার
খাদ্য তালিকা রাখুন কারণ চুলের জন্য প্রোটিন খুবই জরুরী।
আয়রন এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার যেমন-পালং শাক ব্রুকলি এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার
যেমন বাদাম বিজ খান চুলের শিকড় শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়াও ভিটামিনযুক্ত
খাবার আমাদের খাওয়া অত্যন্ত জরুরী যেমন ভিটামিন এ, সি, এবং ই সমৃদ্ধ খাবার
চুলের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। যেমন গাজর কমলালেবু টমেটো কলা ইত্যাদি। উপরোক্ত
আলোচনা কৃত খাবারগুলি আমরা নিয়মিত যদি খাবারের তালিকা রাখি তাহলে অনেক অংশে
চুল পড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
শেষ কথা
এই উপরোক্ত উপায় গুলো মেনে চললে চুল পড়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা
সম্ভব। যদি ঘরোয়া প্রতিকার এবং যত্নের পরও চুল পড়া কম না হয়, তবে একজন
ডার্মাটোলজিস্ট বা ট্রাইকোলজিষ্টের এর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তাদের পরামর্শ
অনুযায়ী মেডিসিন বা চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে।
বন্ধুরা আমার ব্লগটি পড়ে যদি কারো উপকারে আসে বা ভালো লাগে তাহলে
বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে শেয়ার করে দিন। সবাই ভালো থাকবেন
স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url