শিশুদের কষ্ট কাঠিন্য সহজে দূর করুন ঘরোয়া উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য শিশুদের মধ্যে একটি সাধারন সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্য বিরক্তিকর সমস্যা শুধু এরপরে বয়োজ্যেষ্ঠদের নয় শিশুদেরও এই সমস্যায় পড়তে হয় মাঝে মাঝে। এটি সাধারণত খাদ্য ভাস পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া, ফাইবারের অভাব এবং শারীরিক ক্রিয়া-কলাপের অভাবে হতে পারে।
তবে ঘরোয়া কিছু সহজ সমাধান গ্রহণ করে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু কার্যকরী ঘরোয়া পদ্ধতি।
পেইজ সূচিপত্র
- শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ কি
- দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কি কি সমস্যা হয়
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কি
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ানো
- আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ান
- প্রোবায়োটিক খাবার
- শিশুদের খাবারের তালিকায় পাকা পেঁপে রাখুন
- খাবার তালিকায় নাশপাতি ও আপেল রাখুন
- শিশুদের নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
- শিশুদের যে খাবার গুলো দিবেন না
- ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
- শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ কি
কোষ্ঠকাঠিন্য এমন একটি অবস্থা যা একজন ব্যক্তির অন্ত্রের গতিবিধিকে প্রভাবিত করে যখন তারা সপ্তাহে তিনবারের কম মল পাশ করে এবং এ জাতীয় মল সাধারণত কঠিন এবং পাশ করা কঠিন। কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায়ই মলত্যাগ করতে কষ্ট করতে হয় এবং তারা সাধারণত টয়লেটে দীর্ঘ সময় কাটায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে এবং একটি স্বতন্ত্র সমস্যার পরিবর্তে একটি অন্তর্নিহিত অবস্থায় ফলাফল হতে পারে।যাইহোক,কখনো কখনো,এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা হতে পারে। কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পেতে হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্মুখীন ব্যক্তিদের জন্য প্রাথমিক উদ্যোগ। কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায় এ বিষয়ে আজকে আলোকপাত করবো।
দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কি কি সমস্যা হয়
অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ফিকাল ইম্পেকশান হতে পারে। এর অর্থ আপনার শিশুর মলদ্বারে পায়খানা জমা হয়ে আটকে থাকতে পারে। ফিকাল ইনফেকশান এর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে অনেকদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার পরে ডায়রিয়া হওয়া।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শক্তিশালী লেকসিটি বা জোলাপ পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
- সাপোজিটারি মলদার দিয়ে পিচ্ছিল কারী ঔষধ দেওয়া হয় যাতে পায়খানা নরম হয়ে বেরিয়ে আসে।
- মিনি অ্যানিমা মলদার দিয়ে তরল ঔষধ প্রবেশ করানো হয়,যাতে পায়খানা বেরিয়ে আসে।
- কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি যা যন্ত্রপাতির সাহায্যে মলদ্বার থেকে পায়খানা অপসারণ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কি
যেসব কারণে কোষ্ঠুকাঠিন্য হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সহজে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয়। আজকে আমরা ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিধান পাওয়া সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা করব আশা করি আমাদের সাথেই থাকবেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ানো
শিশুদের পর্যাপ্ত পানি পান করানো খুবই জরুরী। পানির অভাবে শিশুদের মল শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাচ্চা যদি একেবারে অনেকটা পানি খেতে না চাই তাহলে অল্প অল্প করে বারে বারে পানি খাওয়ান। এতে দ্রুত কুষ্ঠ কাঠিন্য থেকে সেরে উঠবে বাচ্চা। এমনকি তার হজম জনিত সমস্যা ও আর থাকবে না।
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ান
শিশুদের খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখা উচিত। যেমন শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, ওটস, বাদাম ইত্যাদি। এই ধরনের খাবার মলকে নরম রাখতে সহায়তা করে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, এর ফলে শিশুদের কষ্ট কাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পাই।
প্রোবায়োটিক খাবার
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রোবায়োটিক খাবারের তুলনা নেই। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন দই ছানার পানি ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এগুলো অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখে।
আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার একটি অতি প্রাচীন উপায় অন্ত্রের ক্রিয়া সচল রাখে এবং মলকে নরম করতে সাহায্য করে। শিশুদের প্রতিদিন সকালে এক চামচ আমলকি রস খাওয়ালে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটা কমে যাবে।
শিশুদের খাবারের তালিকায় পাকা পেঁপে রাখুন
পাকা পেঁপে কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং মলকে নরম রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন শিশুকে দুই থেকে তিনটি পাকা পেঁপের টুকরো খাওয়ানো যেতে পারে।
গরম পানির সাথে মধু খাওয়ান
গরম পানির সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে সকালে এবং রাতে খাওয়ালে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মধু হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে ফলে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
খাবার তালিকায় নাশপাতি ও আপেল রাখুন
নাশপাতি ও আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। নাশপাতির রস বা টুকরো করা আপেল শিশুদের খাবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। তাহলে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবে।
শিশুদের নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়াম শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই দূরে রাখে। শিশুদের শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখা জরুরী। খেলাধুলা বা হালকা শারীরিক ব্যায়াম অন্ত্রের গতি বাড়ায় এবং মল সহজে বের হতে সহায়তা করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো
অপর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। ঘুমের অভাব এবং মানসিক চাপ কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে তাই শিশুর ঘুমের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত এবং মানসিক চাপমুক্ত রাখতে হবে।
লেবু ও পানি খাওয়াতে ভুলবেন না
অত্যন্ত উপকারী একটি পানীয় হলো লেবুর শরবত এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা অন্ত্রের মলের গতিবিধি বাড়ায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত লেবু পানি খেয়ে মল নরম হয়ে যায় যার ফলে কমে কোষ্ঠকাঠিন্য। এর পাশাপাশি এই পানি ও লেবুর শরবত খেলে বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি শরীরে গ্রহণ করে। এবং এই ভিটামিন ইমিউনিটি বাড়ানোর কাজে শত% সহায়তা করে।
শিশুদের যে খাবার গুলো দিবেন না
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কোনমতেই ফাস্টফুড খাওয়ানো যাবেনা। এবং তার পাশাপাশি শিশুদের খেতে দেবেন না কোলড্রিংস, চিপস ,ভাজাপোড়া, খাসির মাংস এবং ময়দার তৈরি কোনো খাবার। আশা করছি আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।
পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে না রাখা
পায়খানা চেপে রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আরো বেড়ে যেতে থাকে। এর ফলে পাইলস ও এনাল, ফিশার বা গেজ রোগ সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় তাই পায়খানা বেগ আসলে যত দ্রুত সম্ভব টয়লেট চলে যেতে হবে।
যে সকল শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ আছে তাদের জন্য মলত্যাগের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্যান বা লো-কমোটে বসা তাই সম্ভব হলে লোকোমোট ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি হাই কমোড ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে পায়ের নিচে ছোট টুল দিয়ে পা উঁচু করে বসতে পারেন যাতে হাটু দুটি কোমরের উপর থাকে এতে মল ত্যাগ করতে সুবিধা হয়।
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়াতে নতুন ওষুধ শুরু করার পরে যদি মনে হয় কোষ্ঠকাঠনের সমস্যা বেড়ে গেছে,তাহলে আপনার ডাক্তার কে অবশ্যই জানান।তিনি প্রয়োজনে ঔষধ বদলে দিতে পারেন বা চিকিৎসার জন্য অন্য আরেকটি ঔষধ যোগ করতে পারেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন
- ঘরোয়া উপায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমাধান না হলে
- দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগে ভোগা বা পেট ভাপা লাগলে
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার পর ডায়রিয়া শুরু হলে
- আলকাতরার মতো পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া শুরু করলে
- মলদ্বারে ব্যথা হলে
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে পেট ব্যথা বা জ্বর আসলে
- সব সময় ক্লান্ত ভাব মনে হলে
- কোন কারন ছাড়াই ওজন কমে গেলে বা শুকিয়ে গেলে
- রক্তশূন্যতায় ভুগলে।
বাবা মায়ের জন্য কিছু পরামর্শ
আপনার বাচ্চাদের বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার অর্থাৎ শাকসবজি বেশি খাওয়ান। সবজির মধ্যে ঢেঁড়স,যে কোন শাক, ডাটা,গাজর,পটল,বেগুন,সিম,কুমড়ো লাউ ইত্যাদি অবশ্যই বেশি বেশি করে খাওয়ান। ফলের মধ্যে বেল,পেয়ারা,কালোজাম,কলা অল্প পরিমাণে পাকা আম খাওয়াতে পারেন। মটর মুখ ও ছোলা ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার আছে।
আপনার বাচ্চা একই সবজি রোজ খেতে না চাইলে পুষ্টির মান বজায় রেখে ভিন্ন স্বাদের রান্না করে খাওয়ান। আর যদি বাচ্চা একেবারে খেতে না চায় তাহলে অবশ্যই ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিন। পাশাপাশি অল্প অল্প করে বারে বারে বেশি পানি খাওয়ান। আপনার সন্তান রোজ মলত্যাগ করতেছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনার বাচ্চাকে বুঝিয়ে প্রাথমিক অবস্থাতেই গুরুত্ব দিয়ে সতর্ক হোন।
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় হোমিও ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন
শিশুকে মায়ের বুকের দুধ না দিয়ে গরুর দুধ বা পাউডার দুধ খাওয়ালে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এছাড়া যকৃতের অসুস্থতা বা গর্ব অবস্থায় মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্যেও শিশুর কষ্ট কাটানো হতে পারে। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় হোমিও ঔষধে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
শেষ কথা
আমাদের মনে রাখতে হবে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হলেও তা সময় মতো সমাধান করা অত্যন্ত জরুরী। উল্লেখিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি মেনে চললে সহজে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তবে যদি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আপনার শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এই সহজ ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যবহার করে দেখুন এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url