কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা একটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্য সমস্যা। কিডনিতে পাথর হলে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আজকে আমরা সেই লক্ষণগুলির বিস্তারিত আলোচনা করব এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে কিছু আলাপ আলোচনা করব।
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ সমূহ
কিডনিতে পাথর হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে ,এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ
1.পানির অভাবঃ
পর্যাপ্ত পানি পান না করা কিডনিতে পাথর জমার অন্যতম কারণ হতে পারে।
2. অতিরিক্ত অক্সালেট ঃ
কিছু খাবারে অতিরিক্ত মাত্রায় অক্সালেট থাকে যেমন পালন শাক চকলেট এবং চা-তে অতিরিক্ত মাথায় অক্সালেট থাকে , যা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
3. অতিরিক্ত মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ ঃ
অতিরিক্ত মাংস বা প্রোটিন গ্রহন করলে কিডনিতে পাথর হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তাই আমাদের অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার এবং মাংস কম খাওয়ায় ভালো .
4. পারিবারিক ইতিহাসঃ
যদি পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস থাকে তাহলে আপনারও এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।
5. অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ঃ
কারো শরীরে যদি ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ বা অগ্নাশয় সমস্যা থাকে তাহলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণসমূহ
কিডনিতে পাথর হলে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যা নিচে উল্লেখ করা হলো ঃ
1. তীব্র পিঠের ব্যথা ঃ
কিডনিতে পাথর হলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এ ব্যথা সাধারণত পিঠের দিকে বিশেষত কোমরের অঞ্চলে অনুভূত হয় এবং এটি ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করে, কখনো কখনো ব্যথা নিচে পেট এবং উরুর দিকেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
2. প্রস্রাবে রক্ত ঃ
কিডনিতে পাথর থাকার কারণে প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত বিশাল বা ছোট পাথরের কারণে প্রস্রাবের পথ অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ঘটে থাকে। প্রস্রাবের রং লাল বা হলুদ রঙের হয়ে যায়।
3. প্রসাবের সময় তীব্র ব্যথা ঃ
অনেক সময় প্রসাব করার সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় বিশেষ করে রাতে। কোনভাবেই প্রস্রাব আটকে রাখা সম্ভব হয় না। কিছু মানুষ এতে অস্বস্তি অনুভব করেন এবং তা থেকে মুক্তির জন্য বারবার বাথরুমে যেতে বাধ্য হন।
4. ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি ঃ
কিডনিতে পাথর হলে ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি হয়। কারণ প্রস্রাবের রাস্তায় পাথর এসে আটকে যায় প্রস্রাব ক্লিয়ার হয় না।
5. বমি ও মলের সমস্যা ঃ
অনেক ক্ষেত্রেই কিডনিতে পাথর থাকলে বমি এবং ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে ।এটি সবার ক্ষেত্রে হয় না কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হতে পারে।
6. জ্বর এবং শীতলতা ঃ
যদি পাথরের কারণে সংক্রমণ ঘটে তাহলে জ্বর ও ঠান্ডা অনুভূত করা। ঘনঘন জ্বর হতে পারে এতে ভাববেন না যে অন্য কোন কারণে জ্বর হয়েছে সেটা কিডনিতে পাথর হলেও ঘন ঘন জ্বর হতে পারে।
7. তলপেট ব্যথা ও প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তন ঃ
কিডনিতে পাথর হলে অনেক সময় প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তন হতে পারে। তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। বেশ কিছুদিন ধরে এই ব্যথা হতে থাকলে সাধারণ সমস্যা বলে এড়িয়ে যাবেন না। কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হলো তোল ব্যথা ব্যথা কিছুতেই না কমলে অতি তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা এবং প্রতিকার ঃ
কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসা ও প্রতিকারের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
1. পর্যাপ্ত পানি পান করা ঃ
দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তাহলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে কমে যায়।
2. খাবারের দিকে নজর দেওয়া ঃ
অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া উচিত এবং প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী অক্সিলেট এবং প্রোটিন দুটোই কিডনির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
3. ডাক্তারি পরামর্শ ঃ
আপনি যদি উপরের লক্ষণ গুলোর মধ্যে কোন একটি অনুভব করে থাকেন তাহলে অতি তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যান।
4. ঔষধ ঃ
কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ব্যথা নাশক বা এন্টিবায়োটি ক প্রেস্ক্রিপ্ট করতে পারেন।
5. সার্জারি ঃ
যদি পাথর বড় হয় এবং প্রাকৃতিক ভাবে বের হতে না পারে তাহলে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সার্জারি করে নিতে পারেন।
পরিশেষে ঃ
কিডনিতে পাথর একটি গুরুতর সমস্যা কিন্তু এটি নির্ধারণ করা সহজ নয়। এই রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত যন্ত্রণাদায়ক ও অসুবিধা জনক। আপনি যদি এই লক্ষণ গুলোর মধ্যে কোন একটি অনুভব করেন তাহলে অতি বিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এই সমস্যা কে প্রতিরোধ করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস পর্যাপ্ত পানি পান এবং নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে কিডনির স্বাস্থ্যকে আমরা রক্ষা করতে পারি।
- সবাই সতর্ক থাকুন এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url