আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা



 আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই, চলুন আজকে আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই। আখের গুড়ে রয়েছে, প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের শরীরকে গরম রাখে। আখের গুড় খেলে শরীরের তাপমাত্রা ভালো থাকে। আখের গুড়ে আরও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, পটাশিয়াম যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আখের গুড়ে রয়েছে অত্যাধিক শর্করা ও ক্যালোরি।


 আখের গুড় সরাসরি না খেয়ে শরবত করে খাওয়ায় শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আসুন জেনে নেই আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। 

আখের গুড়ের শরবত কখন খাওয়া উচিত 

শীতকালে তো আমরা সকলেই আখের গুড়ের শরবত খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি,আখের গুড়ের শরবত কখন খাওয়া উচিত? অবশ্যই আমরা এই বিষয়ে জানিনা। তাহলে তো আমাদের অবশ্যই জানা উচিত যে আমাদের আখের গুড়ের শরবত কখন খেলে শরীরের রোগ বালায় দূরে থাকবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক,আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার সঠিক সময় কখন, প্রাচীন কাল থেকে আয়ুরর্বেদরা বিভিন্ন রকমের জরি-বুটির মাধ্যমে রোগ থেকে উপশম পেতেন। প্রাচীনকালে তো এত ওষুধের প্রচলন ছিল না। তাই তাদের হাতের কাছে যে সকল উপকরণ ছিল, সেগুলো দিয়েই তারা প্রাথমিক চিকিৎসা করত। তাই আপনার যদি বদহজম‌ অথবা হজম শক্তি জনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আখের গুড়ের শরবত খাবেন এবং লেবু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। কারণ হজম শক্তিতে আখের গুড়ে শরবতের উপকারিতার কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও যে সকল নারীদের রক্তস্বল্পতা যনিত সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত আখের গুরু শরবত খাই তবে তাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর হবে। আখের গুড়ের উপস্থিত আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং রক্তের লাল লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে। রক্তরসে লোহিতা রক্তকণিকা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। অনেক বাচ্চার স্মৃতিশক্তি, দুর্বলতা বা পড়া মনে রাখতে পারে না তাদেরকে যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আখের গুড়ের শরবত এর সাথে কাঁচা বাদাম খাওয়ানো হয় তাহলে তাদের স্মৃতিশক্তি অনেক উন্নত হয় এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। তাই বাচ্চাদের স্মৃতি শক্তি ব্রেন শক্তি বৃদ্ধি করাতে আখের গুড়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে। 

আখের গুড়ে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা শরীরের তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। গ্রীষ্মকালে বা শারীরিক পরিশ্রমের পর আখের গুড়ের শরবত পান করলে দ্রুত ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর ঠান্ডা এবং চাঙ্গা হয়। আখের গুড়ে থাকা গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ শরীরের এনার্জি লেভেল দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। আখের গুড়ে আরো আছে, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, পটাশিয়াম, আয়রন আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে এই উপাদান গুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে , আমাদের নিয়মিত আখের গুড়ের শরবত খাওয়া উচিত। 

হজম শক্তি বাড়াতে 

আখের গুড়ের শরবত খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। আখের গুড়ের শরবত হজম প্রক্রিয়াকে সহজ ও কার্যকর করে তোলে। আখের গুড়ে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়িয়ে হযম শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। আখের গুড়ের শরবত এসিডিটি এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডিটক্সিফিকেশন বা বিষমুক্ত করতে সহায় 

আখের গুড়ের শরবত প্রাকৃতিকভাবে শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে থাকে। আখের গুড়ের শরবত লিভারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার ও প্রক্রিয়াকে উন্নত করে তোলে। এর ফলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয় এবং ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। 


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 

আখের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে যা কোষের ক্ষতি কমায়, এবং শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে। আখের গুড়ের শরবত লিভার কে ভালো রাখে, সর্দি কাশি জন্য খুবই উপকারী এই গুড়ে রয়েছে পটাশিয়াম সোডিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আখের গুড়ের শরবতে অ্যাজমার সমস্যা ভালো হয়। 

আরো পড়ুন পেয়ারা খাবার ১০ টি উপকারিতা


আখের গুড়ের শরবত আয়রনের উৎস 

আখের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যার রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক। আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করতে সাহায্য করে। নারীদের এবং রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তির জন্য বিশেষভাবে আখের গুড়ের শরবত অত্যন্ত উপকারী। 

ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে 

আখের গুড়ের শরবতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষের পূননবীকরনে সহায়তা করে, যা তক কে উজ্জ্বল ও কোমল রাখে। আখের গুড়ের শরবত ত্বকের শুষ্কতা কমায় এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে, যা ত্বককে সুস্থ ও তরুণ রাখে। আখের গুড়ের শরবত মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যা শরীরের চর্বি জমার ঝুঁকি কমায়। এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান গুলো খুদা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে,এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয় যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আখের গুড়ের শরবত হৃদরোগ প্রতিরোধ করে 

আখের গুড়ের শরবত হৃদরোগের জন্য খুব উপকারী। আখের গুড়ের শরবত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে এবং কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। আখের গুড়ে থাকা পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এবং হৃদয়ের কার্যকারিতা উন্নত করে। আখের গুড়ের শরবত খেলে রক্তের শিরা গুলো স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে পারে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

আরো পড়ুন 

আখের গুড়ের শরবতে দূষণ ও এলার্জি কমে 

আখের গুড়ের শরবত প্রাকৃতিকভাবে শরীরের এলার্জি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দূষণনের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। আখের গুড়ের শরবত শ্বাসকষ্ট এবং এলার্জিজনিত সমস্যা কমাতে সহায়ক যা পরিবেশগত দূষণের কারণে হতে পারে।  দূষণ ও এলার্জি কমাতে আখের রসের শরবতের ভূমিকা অতুলনীয়।

গরমে আখের গুড়ের শরবত শরীল শীতল করে

এই গরমে মানুষ নিজেকে শীতল রাখতে অনেক কিছুই করে থাকে।বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে অনেকে শীতল থাকতে গিয়ে শসা,তরমুজ ও ডাবের পানি খেয়ে থাকে।তবে এই গরমে শরীর শীতল রাখতে গুড়ের শরবত হতে পারে কার্যকরী একটি উপায় গুড় সাধারণত যেকোনো অসুখ থেকে রক্ষা করতে শরীরকে শক্তি যোগায়। আখের রস থেকে আমাদের দেশে গুড় তৈরি করা হয়, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা।গুড়ের উপকারিতা বেশি। আখের গুঁড়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও শর্করা থাকে।সেই সঙ্গে থাকে প্রয়োজনীয় খনিজ। যে কারণে আখের গুড়ের চিনিও তৈরি করা হয়।আজকাল ঘরে ঘরে ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়ে চলেছে।আর সেই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতেও কিন্তু চিনি একেবারে না খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিবর্তে গুড় খেতে বলা হয়।যারা ভয় পান যে গুড় খেলে সুগার বেড়ে যায় কিনা,তাদের এমন বিভ্রান্তি থাকলে আখের গুণ না খাওয়া ভালো। প্রয়োজনে তালের গুড় খাওয়া আবশ্যক। 

ইলেক্ট্রো লাইট ব্যালেন্স বজায় থাকে 

আখের গুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাশিয়াম।তাই শরীরে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখার কাজে আখের গুড়ের শরবতে জুড়ি মেলা ভার।বিশেষত,যারা প্রতিদিনই সূর্যের প্রখর রোদের সঙ্গে লড়াই করে ঘাম জড়িয়ে কাজ করেন,তারা সকাল সকাল এই শরবত গলায় ঢেলে নিন।এতে শরীরে এনার্জির ঘাটতি দূর হবে।সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না।তবে সুস্থ থাকতে চাইলে আখের গুড়ের শরবতে চুমুক দেয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। নইলে অচিরেই পড়তে পারেন ডিহাইড্রেশনের ফাঁদে।

ইমিউনিটি বুস্টার ড্রিংকস 

আখের গুড়ের শরবত খেলে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-৬ এর ঘাটতি মিটবে। ফলসরুপ বাড়বে ইমিউনিটি। এতে রয়েছে একাধিক উপকারী ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ছোট বড় অসুখকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। তার শরীরের শক্তি ফেরাতে আখের গুড়ে সরবত সঙ্গে যত শীঘ্রই সম্ভব বন্ধুত্ব করে ফেলুন। তবে সাবধান থাকতে হবে, আখের গুড়ের শরবতের সঙ্গে কিন্তু অন্য কিছু মেশানো যাবে না। শুধু এক গ্লাস পানিতেই গুর ভিজিয়ে সকালে খেয়ে ফেললেই হবে। 

ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচায় 

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, নানা ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ। সর্দি-কাশি লেগে রয়েছে ঘরে ঘরে। ভাইরাস শুরু ফ্লু থেকে বাঁচতে অন্যতম উপাদান হলো আখের গুড়ের শরবত। সকালে বিকালে গুড়ের চা খেলে সর্দি-কাশির সমস্যা দূর হবে।

তেতুল আখের গুড়ের শরবত 

দুই চামচ তেতুল অল্প পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এরপর কোছলে কাত বের করে নিন। তেতুলের কাথের সঙ্গে স্বাদমতো আখের গুড়, হাফ চামচ ভাজা জিরের গুঁড়ো, সামান্য নুন আর দের কাপ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। পরিবেশনের আগে ছেঁকে নিন। গ্লাসে আগে থেকে কয়েক কুচি বরফ দিয়ে রাখুন।

পাকস্থলী ভালো রাখতে আঁখের শরবত 

আপনি যদি পাকস্থলী সমস্যায় ভুগতে না চান তাহলে অবশ্যই আখের গুড়ের শরবত নিয়মিত খান। এটি যে শুধু পাকস্থলী ভালো রাখে তা শুধু নয় পাশাপাশি অন্ত্র ফুসফুস, খাদ্যনালী সুস্থ রাখে একসঙ্গে এতগুলি উপকার হাত ছাড়া করতে না চাইলে অবশ্যই আখের গুড়ের শরবত নিয়মিত খাবেন।

হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় আখের গুড়ের শরবত 

মানবদেহে রক্তের প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্তশূন্যতা সহ আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে চাইলে নিয়মিত গুড়ের শরবত খান। আখের গুড়ের শরবত রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।




শেষ কথা 

আখের গুড়ের শরবত খেলে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়, এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে সুস্থ ও সজীব রাখার একটি দুর্দান্ত কৌশল। আখের গুড়ের শরবতকে বিভিন্ন ওষুধের সাথে তুলনা করা হয়।

প্রিয় পাঠক আখের গুড়ের শরবতের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের কি জানা ছিল। আখের গুড়ের শরবত খাওয়ার তথ্য গুলি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে, আজ থেকে আখের গুড়ের শরবত খাওয়া শুরু করে দিন। আমার তথ্যগুলো যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনারা আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে আমার পোস্টটি শেয়ার করে দিন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url