হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে রাখুন
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে, আপনি কি বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
পেজ সূচিপত্রঃ হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে রাখুন
- হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা
- হাতিশুর গাছের পাতার উপকারিতা
- হাতিশুর গাছ চেনার উপায়
- যৌন সমস্যার সমাধানে হাতিশুর গাছ শতভাগ কার্যকরী
- হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
- হাতিশুর গাছের উপকারিতা
- হাতিশুর গাছের ব্যবহৃত অংশ
- শেষ কথা ঃহাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে রাখুন
হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা
হাতিশ্তর গাছের শিকড় খাওয়ার উপকারিতা জন্য প্রাচীন কাল থেকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি আয়ুর্বেদ,ইউনানী এবং বিভিন্ন স্থানীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতে পারে এর মধ্যে কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
- হজম শক্তি উন্নত করে ঃ হজম শক্তি বাড়াতে হাতিশ্তর গাছের শিকড় উপকারী। এটি খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত শিকড় খেলে পেটের সমস্যা কমে যায়।
- প্রদাহনাশক গুণাবলীঃ বিশেষজ্ঞদের মতে মানব দেহের প্রদাহ কমাতে হাতিশুর গাছের শিকড় খুবই কার্যকরী। এতে থাকা বিশেষ উপাদান শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমানোর কাজ করে বিশেষ করে যেসব মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাসিস বা প্রদাহ জনিত রোগ রয়েছে তাদের জন্য খুবই উপকারী হাতিশ্তর শিকড় শরীরের টিস্যুর ভেতরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- রক্ত পরিষ্কার করতে ঃ রক্ত পরিস্কার করতে হাতিশুর গাছের শিকড় এর ভূমিকা অনেক। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সক্ষম এত এবং রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করতে সাহায্য করে,বিশেষভাবে ত্বকের সমস্যা গুলি যেমন পিম্পল ফুস্কুড়ির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- শ্বাসকষ্ট দূর করতেঃ শ্বাসকষ্টের সমস্যা যেমন হাঁপানি সর্দি-কাশি ইত্যাদির বিরুদ্ধে হাতি সুরের গাছ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে উপস্থিত ভেষজ উপাদান শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খোলামেলা পরিবেশ সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
- হৃদপিন্ডের সুস্থতা ঃ হাতিশুর এর গাছ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিন্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, এবং হার্টের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হৃদরোগের প্রতিরোধ সহায়ক হতে পারে।
- মানসিক চাপ কমাতে ঃ হাতিশ্তর গাছের শিকড় মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি নার্ভাস সিস্টেমের উপর কাজ করে এবং মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এর ভিতরে থাকা ভেষজ উপাদান মানসিক শক্তি বাড়াতে সহায়ক।
হাতিশুর গাছের পাতার উপকারিতা
হাতিশ্তর গাছের পাতা আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাতিশুর গাছের পাতার মধ্যে উপস্থিত ঔষধি গুণাবল এর মানব শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের সহায়ক হতে পারে, এর পাতার বিভিন্ন ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ঃ
- হাতিশুর গাছের পাতা বেটে ব্যথা যুক্ত জায়গায় ব্যবহার করলে ব্যথা কমে যায়।
- হাতিশুর গাছের পাতা সাধারণ জ্বরের সমস্যায় ব্যবহৃত হয় এর পাতায় থাকা ভেষজ উপাদান শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং দ্রুত সর্দি ও কাশি সারাতে সহায়ক।
- হাতিশ্তর গাছের পাতা বেটে খেলে রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
- হাতিশুর গাছের পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অধম সমস্যার দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- হাতিশ্তর গাছের পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে এবং রক্ত সঞ্চালনকে কার্যকরী করতে সহায়তা করে।
- হাতিশ্তর গাছের পাতা শরীরের সব ধরনের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে এর মধ্যে উপস্থিত এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- হাতিশুর গাছের পাতা একজিমা,ফুসকুড়ি দাদ ইত্যাদি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
যদিও হাতিশ্তর গাছের পাতা অনেক উপকারী তবুও এর ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হতে পারে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
হাতিশুর গাছ চেনার উপায়
ইতিমধ্যে হয়তোবা আপনারা হাতিশুর গাছ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে গেছেন। কিন্তু অনেকেই এই হাতিশ্তর গাছ চেনেন না বা দেখেননি। সাধারণত গ্রামে গঞ্জে বাড়ির আঙিনায় আনাচে-কানাচে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়, শহর অঞ্চলের রাস্তার ধারে কিছু কিছু জায়গায় চোখে পড়ে। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক হাতিশ্তর গাছ দেখতে কেমন হয়ঃ
- হাতিশুর গাছের পাতা সবুজ রঙের ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে।
- হাতিশুর গাছ লম্বায় ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- হাতিশুর গাছের পাতার কিনারা তোরাম্বায়িত হয় এবং পাতার উপর খসখসে কাটার মত লোম থাকে।
- হাতিশুর গাছের ফুল ছোট সাদা বর্ণের এবং ঝাঁকড়া হয়ে থাকে।
- হাতিশুর গাছের ফল সামান্য বাদামি ভাব বর্ণের গোলাকার এবং লম্বা হয়ে থাকে।
- হাতিশুর গাছের কান্ড সাধারণত লতানো হয় এবং লম্বা দুই থেকে তিন মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
- হাতিশুর গাছের বীজ ছোট এবং কালো রঙের হয়।
যৌন সমস্যার সমাধানে হাতিশুর গাছ শতভাগ কার্যকরী
প্রাচীন কাল থেকেই যৌন সমস্যার চিকিৎসায় হাতিশ্তর গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। যৌন সমস্যায় বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা খুবই কার্যকর একটি ভেষজ ঔষধ। যৌন চাহিদা মেটাতে যাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাদের জন্য হাতিশুর গাছের কথা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করে দেওয়া আছে।
আরো পড়ুন ঃপাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন
যেসব পুরুষদের বন্ধ্যাতের সমস্যা রয়েছে সেসব পুরুষ যদি এই হাতিশুর গাছের শিকড় খেয়ে থাকে অবশ্যই তাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যৌন ক্ষমতায় দুর্বল তাদের জন্য এই গাছের শিকড় খুবই উপকারী এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে আরও বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
যৌন সমস্যায় হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার কার্যকারী নিয়ম
- প্রথমত হাতিশ্তর গাছের শিকড় উঠিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে এক থেকে দুই ইঞ্চি পরিমাণ কাটতে হবে এরপরে এই শিকড় টি পানের সাথে খেতে হবে।
- রাতে ঘুমোতে যাবার আগে অবশ্যই খেতে হবে। এবং প্রতিদিন সকালে একটি হাতিশ্তর গাছের শিকড় পান পাতা দিয়ে খেতে হবে এভাবে দুই থেকে তিন মাস খাওয়া যাই তবে অবশ্যই যৌন সমস্যার সমাধান হাতে হাতে পাওয়া যাবে।
- সহবাসের কমপক্ষে ১৫ থেকে ২৫ মিনিট আগে পান পাতা কালোজিরা এবং মধু দিয়ে এই শিকড় খেতে হবে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা অতিরিক্ত কিছুই খাবেন না এতে আপনার পেটের সমস্যা হতে পারে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
হাতিশ্তর গাছের শিকড় খাওয়ার পদ্ধতি ও পরিমাণের ব্যাপারে কিছু নিয়ম রয়েছে গাছের শিকড় ব্যবহারের আগে অবশ্যই নির্দিষ্ট পদ্ধতির বা প্রস্তুত করতে হয় আসুন তাহলে হাতেশ্তর গাছের শিকড় খাওয়ার কয়েকটি সাধারণ নিয়ম নিয়ে আলোচনা করিঃ
- শিকড় প্রস্তুতি ঃ হাতিশুর গাছের শিকড় প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। মাটির দাগ বা কোন ধরনের ময়লা থাকা যাবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত করতে হবে। এরপরে শিকড়ের বাইরের খোসা তুলতে হবে শিকড়কে ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে যেন খেতে সমস্যা না হয়।
- সিদ্ধ করে খাওয়া ঃ শিকড় খাওয়ার আগে এটি সিদ্ধ করে নেয়া যেতে পারে। সাধারণত শিকড়ের টুকরোগুলো পানিতে ২৫- ৩০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে, এরপরে এটি ঠান্ডা করে খাওয়া যায় সিদ্ধ করা শিকড় খেলে এটি হজমের জন্য আরো সহায়ক হতে পারে। এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করবে।
- পাউডার বা রস হিসেবে ব্যবহারঃ হাতিশ্তর গাছের শিকড় চাইলে আপনি পাউডার করে খেতে পারেন। শুকনো শিকর গুঁড়ো করে পাউডার তৈরি করে পানি বা মধুর সঙ্গে মিশে খেতে পারেন।
- অন্য ঔষধের সঙ্গে মিশ্রণ করে ঃ আপনি চাইলে হাতিশুর গাছের শিকড় একা না খেয়ে অন্যান্য ভেষজ উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন এটি মধু আদা বা তুলসী পাতা দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে যা শরীরে আরো ভালোভাবে কাজ করবে।
হাতিশুর গাছের উপকারিতা
হাতিশুর গাছের অপকারিতা বলতে তেমন কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত খাওয়া অথবা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খাবার ফলে অল্প কিছু অপকারিতা হতে পারে, চলুন হাতিশুর গাছের অপকারিতা গুলো কি কি জেনে নেয়া যাকঃ
- স্তন্যদানকারী মা এবং গর্ভবতী মহিলা হাতিশুর গাছের শিকড় বা গাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- যাদের মাত্রা অতিরিক্ত এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা হাতের শুর গাছের মূল সেবন থেকে নিজেকে অনেক অনেক দূরে রাখুন।
- যাদের রক্তচাপ কম তারা অবশ্যই হাতে সুরের গাছ খাবেন না।
তবে মজার ব্যাপার এই হচ্ছে আপনের জেনে খুশি হবেন,এই গাছের অপকারিতা গুলো তেমন একটা মারাত্মকও না। তবে অতিরিক্ত উপকারিতা পাবার লোভে আপনি মাত্র অতিরিক্ত খাওয়া শুরু করবেন না, এতে আপনার হিতে বিপরীত হতে পারে।
হাতিশুর গাছের ব্যবহৃত অংশ
হাতিশুর গাছের পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত সবই মূলত ব্যবহৃত হয়। আমাদের প্রকৃতিতে জন্মানো অনেক উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে অনেক উদ্ভিদ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। হাতিশুর গাছও প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়। হাতিশুর একটি অচাযকৃত উদ্ভিদ।
- পাতা
- কান্ড
- শিকড়
- ফুল
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এসব উদ্ভিদের রয়েছে নানান ব্যবহার এবং গুনাগুন। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাণিজ্যিক কৃষির প্রভাব এবং গাছটির গুনাগুন সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানা, ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পতিত জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে এই সমস্ত ঔষুধি উদ্ভিদের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
শেষ কথা ঃহাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে রাখুন
হাতিশুর গাছের শিকড় এক ধরনের প্রাকৃতিক ভেষজ সম্পদ যা আমাদের স্বাস্থ্যের নানা সমস্যা দূর করতে সক্ষম একটি শিকড়ের মধ্যে উপস্থিত উপকারী উপাদান আমাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে ব্যবহারের আগে সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
অতিরিক্ত ফল পাওয়ার আশায় ইচ্ছামত কোন ওষুধই খাবেন না যে কোন ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন আজকের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url