মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কিভাবে লাভবান হবে কৃষক
মালচিং পদ্ধতিতে কৃষিতে কম খরচে অধিক ফলনের একমাত্র পদ্ধতি। আপনি কি এই চাষ পদ্ধতি জানেন কি,যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
পেইজ সূচিপত্র ঃমালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কিভাবে লাভবান হবে কৃষক
- মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সুবিধা এবং পদ্ধতি
- মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সুবিধা
- মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ
- মালচিং পদ্ধতিতে জমি প্রস্তুতি
- মালচিং পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ
- মালচিং পদ্ধতি প্রয়োগ
- মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো পরিচর্যা
- মালচিং পদ্ধতিতে ফসল সংগ্রহ
- শেষ কথাঃমালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কিভাবে লাভবান হবে কৃষক
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সুবিধা এবং পদ্ধতি
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ একটি আধুনিক পদ্ধতি। আমাদের বাংলাদেশ টমেটো একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষির ফসল,যা সারা বছর চাষ করা যায় এবং দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই টমেটো চাষের জন্য সঠিক পদ্ধতি এবং যত্ন গ্রহণ করতে হয়,যাতে কৃষকরা ভালো ফলন পেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃমালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ
মালচিং পদ্ধতি টমেটো চাষে বিশেষভাবে কার্যকরী একটি প্রযুক্তি, যাও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পানি সাশ্রয় এবং মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। আজকে আমরা মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সুবিধা এবং পুরো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের সুবিধা
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের অনেক সুবিধা রয়েছে। নার্সিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে মাটির উপরে কোন উপকরণ যেমন পলিথিন তৃণ্য শস্য কাঠের খন্ড শুকনো পাতা বা অন্যান্য উপকরণ বিছিয়ে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি ফলে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় চলুন সেগুলি জেনে নেই ঃ
- মাটির সুরক্ষা এবং ক্ষয় রোধ ঃমালচিং মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি ভারী বৃষ্টিপাতের সময় মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং মাটির কাঠামো ভালো রাখে।
- আদ্রতা বজায় রাখা ঃ মালচিং মাটির আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে গাছের শিকড়ের জন্য প্রয়োজনীয় পানি কম ব্যবহৃত হয় এবং মাটি শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
- আগাছা দমন ঃ মালচিং পদ্ধতিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কারণ এটি মাটির উপর আবরণ তৈরি করে, যার ফলে আগাছা গুলি জন্মাতে পারেনা।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ঃ মালচিং মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহায়ক, বিশেষ করে গরমের সময় মাটি ঠান্ডা থাকে এবং শীতকালে এটি মাটি উষ্ণ রাখে।
- পোকামাকড় এবং রোগ প্রতিরোধে ঃ মালচিং পদ্ধতিতে মাটির উপর একটি আবরণ তৈরি করে, যা মাটির সংস্পর্শে থাকা রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- ফসলের মান বৃদ্ধি ঃ মালচিং টমেটোর ফল গুলোকে কে পরিষ্কার রাখে এবং মাটির কাঁদা বা ময়লা থেকে সুরক্ষা দেয়, ফলে ফসলের মান বৃদ্ধি পায়।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ
মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এই ধাপ গুলো বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য টমেটো চাষে সফল হতে সাহায্য করবে।
মালচিং পদ্ধতিতে জমি প্রস্তুতি
টমেটো চাষের জন্য প্রথমে জমির সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে। জমি নির্বাচন ও প্রস্তুত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
- জমির ধরন ঃ টমেটো চাষের জন্য স্রেফ বেলে দো-আঁশ মাটি বা দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। এই ধরনের মাটিতে ভালো জল নিষ্কাশন হয় এবং শিকড় বৃদ্ধি সহজ হয়।
- মাটি পরীক্ষা ঃ টমেটো গাছের জন্য মাটির পিএইচ ৬.০ থেকে ৬.৮ এর মধ্যে থাকা উচিত। মাটি র অম্লীয়তা বেশি হলে, অতিরিক্ত চুন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পানি নিষ্কাশন ঃ মাটি সঠিক নিশ্চিত করতে হবে, যাতে পানি সহজেই বেরিয়ে যেতে পারেন মাটিতে জলা বদ্ধতা না হয়।
- মাটি চাষ ঃ জমি ভালোভাবে আলগা করতে হবে এবং ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীরতায় মাটি উল্টাতে হবে। এতে মাটির বায়ু চলাচল ভালো হয় এবং গাছের শিকড় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
মালচিং পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ
টমেটো চাষে সার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করলে গাছ ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ভালো ফলন হয়।
প্রাথমিক সার ঃ মাটির প্রাথমিক সার হিসেবে ২০-২৫ টন গোবর সারবা কম্পোস্ট প্রতি এ করে প্রয়োগ করা উচিত। এটি মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মূল সার ঃ গাছ রোপনের পর ১০ কেজি ইউরিয়া,২০ কেজি টিএসপি (ট্রি পটাশিয়াম ফসফেট) এবং ১৫ কেজি এমপিও একর প্রতি প্রয়োগ করা উচিত।
পুনরায় সার প্রয়োগ ঃ ফুল আসার সময় ৫ কেজি ইউরিয়া, প্রতি একর প্রদান করতে হবে। সার দেওয়ার পর নিয়মিত পানি দেওয়া জরুরি।
মালচিং পদ্ধতিতে চারা রোপন
টমেটো চাষের জন্য সঠিক চারা নির্বাচন এবং রোপণের সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- চারা নির্বাচন ঃ টমেটো গাছের চারা স্বাস্থ্যকর, রোগমুক্ত এবং ভালোভাবে বেড়ে ওঠা হওয়া উচিত। ৪-৬ সপ্তাহ বয়সী শক্তিশালী চারাই চারা রোপনের জন্য উপযোগী।
- রোপনের সময় ঃ বাংলাদেশের সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে টমেটো রোপন করা হয়। জমি প্রস্তুত করার পর, চারা ১৮-২৪ ইঞ্চি দূরত্বে রোপন করতে হবে।
- রোপনের গভীরতা ঃ সার রোপণের সময় এটি মাটির সঙ্গে সমান ভাবে থাকতে হবে, যাদের শিকড় মাটির ভেতর ভালোভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে।
মালচিং পদ্ধতি প্রয়োগ
মালচিং পদ্ধতিতে সঠিক উপকরণ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ টমেটো চাষে সাধারণত দুটি ধরনের মার্কিন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ঃ
- পলিথিন মালচিং ঃ পলিথিনের পাতলা স্তর মাটির উপর বিছিয়ে দেওয়া হয়। পলিথিনের মধ্যে ছিদ্র তৈরি করে গাছের চারা রোপণ করা হয়। এটি মাটির আদ্রতা বজায় রাখে এবং আগাছা দমন করে।
- জৈব মালচিং ঃ শুকনো পাতা, তৃণ শস্য বা অন্য কোনো জৈব উপকরণ মাটির উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি পরিবেশবান্ধব এবং মাটির জন্য উপকারী।
মালচিং এর স্তর ৩-৪ ইঞ্চি পুরু হওয়া উচিত। পলিথিন ব্যবহারের সময় ছিদ্র গুলি গাছের শিকড়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো পরিচর্যা
- পানি দেওয়া ঃ মালচিং পদ্ধতিতে জমির আর্দ্রতা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তবে নিয়মিত পানি দিতে হবে। গরমের সময় অধিক পানি দিতে হবে, তবে জলাবদ্ধতা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- আগাছা দমন ঃ মালচিং আগাছ দমন করতে সহায়ক হলেও মাঝে মাঝে আগাছা উঠিয়ে ফেলা উচিত।
- পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ ঃ টমেটো গাছের জন্য প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন তামাকের পাতা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান।
মালচিং পদ্ধতিতে ফসল সংগ্রহ
টমেটো গাছ সাধারণত ৮-১০ সপ্তাহ পর ফল দেয়। টমেটো পেকে যাওয়ার পর যখন ফলের রং পরিবর্তন হয়, তখন তার সংগ্রহ করা উচিত। সঠিক সময়ে ফল সংগ্রহ করলে ফলের মান উন্নত হয়।
শেষ কথাঃমালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কিভাবে লাভবান হবে কৃষক
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি অত্যান্ত লাভজনক এবং কার্যকারী পদ্ধতি। এটি আদ্রতা বজায় রাখে, আগাছা দমন করে, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহায়ক, রোগবালাই প্রতিরোধে কার্যকর।
সঠিক জমি প্রস্তুতি,সার প্রয়োগ, চারা রোপন এবং মালচিং পদ্ধতির মাধ্যমে টমেটো চাষের কৃষকরা অধিক ফলন এবং ভালো মানের ফসল পেতে পারেন। মালচিং পদ্ধতিতে বিশেষ করে ছোট খামারিদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, কারণ এটি তাদের শ্রম এবং খরচ কমাতে সহায়ক।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url