পালং শাকের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা জানুন

পালং শাকের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানেন। এটি আমাদের শরীরের অত্যন্ত উপকারী এবং স্বাস্থ্যের জন্য নানান ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।

পালং-শাকের-১০-টি-স্বাস্থ্য-উপকারিতা-এবং-অপকারিতা-জানুনপালং শাক একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সরবরাহ করে থাকে। চলুন আজকের আর্টিকেলে আমরা পালং শাকের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই। 

পেইজ সূচিপত্রঃপালং শাকের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা জানুন

পালং শাকের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

পালং শাক একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর শাকসবজি, যা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন খনিজ মিনারেল এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি আমাদের শরীরের অত্যন্ত উপকারী এবং স্বাস্থ্যের জন্য নানা ধরনের পুষ্টির উপাদান সরবরাহ করে থাকে। চলুন এখন আমরা পালং শাকের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করি ঃ

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করেঃ পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এটি মাকুডিজেনারেশনরেশন এবং তোকে অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ সহায়তা করে।

হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ পালং শাক হৃদরোগ প্রতিরোধ সহায়ক। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এবং আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম হৃদ যন্ত্রের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।  

হাড় শক্তিশালী করতেঃ পালং শাকের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে এবং অ্যাস্ওটিপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে ঃ পালং শাকে উচ্চ পরিমাণে আয়রন থাকে, যার রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আয়রন শরীরের হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বাড়ায়, ফলে রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ওজন কমাতে সাহায্য করে ঃ পালং শাকের চুষে কম ক্যালোরি এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা পেট ভর্তি রাখে এবং খোদার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে এটি ওজন কমাতে সহায়ক। 

এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ঃ পালং শাকের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন C, ভিটামিন E এবং বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষের ক্রয় রোধ করতে সহায়তা করে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ঃ পালং শাকের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) খুবই কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ তীব্রভাবে বাড়ায় না। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। 

পেটে স্বাস্থ্য ভালো রাখে ঃ পালং শাকের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা পেটে স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং দূর করতে সহায়তা করে। এটি হজমে সহায়ক এবং অন্ত্রের কার্যক্রম সুস্থ রাখে।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী ঃ পালং শাকের মধ্যে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে গড়ে তোলে। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃকিসমিসের ২৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

পালং শাকে যে সকল ভিটামিন থাকে 

পালং শাক একটি পুষ্টিকর শাক এই শাকে বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ থাকে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ভিটামিন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাকঃ

ভিটামিন A ঃ পালং শাকে ভিটা ক্যারোটিন থাকে, যার শরীরে ভিটামিন A এ‌ রূপান্তরিত হয়। এটি চোখে স্বাস্থ্য, দৃষ্টিশক্তি উন্নত এবং ত্বক ও শরীরের কোষের সুরক্ষায় সহায়তা করে। ভিটামিন A গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ু এবং চোখের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয়। 

ভিটামিন C‌ঃ পালং শাকের মধ্যে ভিটামিন C‌ প্রচুর পরিমাণে থাকে, যার শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং সর্দি-কাশি, ইনফেকশন সহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এটা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে, কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে এবং শরীরের আয়রনের শোষণ বাড়ায়।

ভিটামিন K ঃ পালং শাকের মধ্যে ভিটামিন K পরিমাণে অনেক বেশি থাকে, যা হারে স্বাস্থ্য এবং রক্তের জমাট বাঁধার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক। ভিটামিন K রক্তের কোয়াগুলেশন বা জমার বাধা প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে কার্যকর রাখে। 

ভিটামিন E ঃ ভিটামিন E পালং শাকে উপস্থিত একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট, যার শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং বার্ধক্য জনিত সমস্যা যেমন ত্বকে বলে রেখা ও দাগ কমাতে সহায়তা করে। 

ভিটামিন B6 ঃ পালং শাকে ভিটামিন B6 রয়েছে, যে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। 

ফলিক অ্যাসিড (ভিটামিন B9)ঃ পালং শাক ফলিক এসিডের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ু সিস্টেমের সঠিক গঠন এবং উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয়। এটি নিউরাল টিউব ডিফেক্ট যেমন স্পাইনাল বিফিডা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

পালং শাকের জুসের উপকারিতা 

পালং শাকের জুস একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর পানীয়। এটি শরীরে নানা ধরনের উপকারিতা প্রদান করে এবং সহজে তৈরি করা যায়। পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন,খনিজ, এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার যার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

পালং-শাকের-১০-টি-স্বাস্থ্য-উপকারিতা-এবং-অপকারিতা-জানুন

পালং শাকের জুস বানানোর নিয়ম 

  • ১ কাপ পালং শাক।
  • ১ টা আপেল বা কমলা (ঐচ্ছিক, স্বাদ ও পুষ্টি বাড়ানোর জন্য)।
  • ১ টুকরো আদা (ঐচ্ছিক)।
  • ১ টেবিল চামচ মধু বা চিনির শর্করা (ঐচ্ছিক)
  • ১/২ কাপ পানি (কিম্বা বেশি, প্রয়োজন অনুযায়ী) 

পদ্ধতি ঃ

পালং শাক পরিষ্কার করুন ঃ প্রথমে পালং শাক গুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। শাকের পাতা থেকে কষ্টকর অংশগুলো এবং মাটির কোনা সরিয়ে ফেলুন। 

বাকি উপকরণ প্রস্তুত করুন ঃ যদি আপনি আপেল বা কমলা ব্যবহার করতে চান, তবে তা ছেঁটে কিউব আকারে কেটে নিন। আদাব ছোট করে কেটে নিতে পারেন। 

ব্লেন্ডিং ঃ এখন একটি ব্লেন্ডারে পালং শাক, আপেল বা কমলা, আদা, (যদি ব্যবহার করেন) এবং মধুমা চিনির শর্করা (যদি ব্যবহার করেন) দিয়ে ব্লেন্ড করুন। প্রয়োজনমতো পানি যোগ করুন যেন মিশ্রণ টি তরল অবস্থায় থাকে। 

ছাকনি দিয়েছে কে নিন ঃ যদি আপনি জুসের মধ্যে শাকের অংশ না চান, তবে ব্লেন্ড করার পর এটি একটি ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে পারেন। তবে এটি স্বাদ অনুযায়ী আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করবে। 

পান করুন ঃ আপনার পালং শাকের স্বাস্থ্যকর জুস প্রস্তুত। এটি ঠান্ডা বা বরফ দিয়ে উপভোগ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় পালং শাকের উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এটি মা এবং শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পালং শাক এক ধরনের পুষ্টিকর ছাদ গর্ভঅবস্থায় বিশেষভাবে উপকারী। এটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যেমন খনিজ ভিটামিন আইরন ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

এর মধ্যে থাকা ফলিক এসিড ভিটামিন কে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি গর্ভের শিশুকে পুষ্টি জগতে সহযোগিতা করে। তাই গর্ভাবস্থায় পালংশাক খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

পালং-শাকের-১০-টি-স্বাস্থ্য-উপকারিতা-এবং-অপকারিতা-জানুন

পালং শাক রান্না করে খাওয়ার নিয়ম 

পালং শাক একটি পুষ্টিকর শাক,যা সহজে রান্না করা যায় এবং বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবারের ব্যবহৃত হতে পারে। পালং শাক রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে এবং এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

  • ডাল সিদ্ধ করা ঃ প্রথমে মসুর ডাল ভালোভাবে ধুয়ে দুই কাপ পানি দিয়ে ১৫-২০ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। আপনি চাইলে প্রেসার কুকারেও সেদ্ধ করতে পারেন।
  • পালং শাক রান্না করা ঃ একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ, রসুন, আজও খুশি দিয়ে মেরে সোনালী করে ভিজে নিন। এরপর টমেটো কচি যোগ করে ভালোভাবে রান্না করুন যতক্ষণ না টমেটো সেদ্ধ হয়ে মিশে যায়। 
  • মসলা যোগ করা ঃ এরপর হলুদ গুড়া,জিরে গুঁড়া, শুকনো মরিচ ও কাঁচা মরিচ যোগ করুন। এই মসলা একটু ভেজে নিন যাতে গন্ধ বের হয়। 
  • পালং শাক যোগ করা ঃ এবার পালং শাকের পাতা ভালোভাবে ধুয়ে কেটে নিয়ে এই মসলায় যোগ করুন। পালং শাক দ্রুত পচে যায়, তাই একটু নেড়ে নেড়ে সাপটিকে মসলার সাথে মিশিয়ে দিন। 
  • ডাল মিশানো ঃ সেদ্ধ করা মসুর ডাল মিশিয়ে দিন। এরপর পর্যন্ত পরিমাণ পানি দিয়ে ৫-৭ মিনিট রান্না করুন যাতে সব উপকরণ একসাথে মিশে যায় এবং ডালের সাথেও সাক টি ভালোভাবে মিশে যায়।
  • স্বাদ পরীক্ষা ঃ রান্না শেষ হলে লবণ এবং গরম মসলা দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করুন। রান্না হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। 
  • পালং শাকের ডাল প্রস্তুত ঃ গরম গরম পালং শাকের ডাল পরিবেশন করুন। রুটি, পরোটা অথবা ভাতের সাথে খেতে খুবই সুস্বাদু। 

শেষ কথা ঃপালং শাকের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা জানুন

পালং শাক খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে, শরীরকে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় পালং শাক অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

আমার ব্লগটি পড়ে আপনারা যদি উপকার হয় তাহলে আপনার চিনা পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্লগটি শেয়ার করুন,ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url