চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানেন কি আপনি? চা,
বিশ্বকাপে জনপ্রিয় পানীয় যা শতাব্দী ধরে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে
উঠেছে।
চলুন আজকে আমরা চায়ের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
পেইজ সূচিপত্র:চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা
চা, বিশ্বকাপে একজন জনপ্রিয় পানীয় যা শতাব্দী ধরে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি
অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু চা পানের স্বাদই নয়, এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য
উপকারিতা ও বেশ চমকপ্রদক।আজকে আমরা চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা অপকারিতা এবং
চায়ের সাথে কিছু খাবার বা পানীয় মিলিয়ে খেলে কি ধরনের ক্ষতি হয় তা নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন:বরই পাতার উপকারিতা এবং কোভিড ১৯ পরবর্তী এলার্জি বা চুলকানিতে ব্যবহার
চা খাবার স্বাস্থ্য উপকারিতা
চা চা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের
ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পায়ের উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান যেমন
ক্যাফেন, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেল গুলি শরীরের নানা ধরনের উপকারে
আসে। চলুন চা খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা গুলো নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা
করা যাক।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
চা, বিশেষ করে সবুজ চা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর। এর মধ্যে থাকা পলিফেনলস ও
ক্যাটেচিন শরীরের ফ্রি রেডিকেলগুলো যা কোষের ক্ষতি করতে পারে তা থেকে সুরক্ষা
প্রদান করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে
তোলে এবং বয়স বাড়ানোর প্রক্রিয়া ধীর করতে সহায়তা করে।
.webp)
- হৃদরোগ প্রতিরোধ: চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। বিশেষ করে সবুজ চা, কালো চা, এবং উলং চায়ে থাকা ক্যাটেচিন এবং পলিফেনলস রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এটি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
- ওজন কমাতে সহায়ক: চায়ে উপস্থিত ক্যাফিন ও পলিফেনলস মেটাবলিজম বাড়ায় এবং শরীরের চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। বিশেষ করে সবুজ চা ও উলং চা শরীরের ফ্যাট বার্ন করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, যাও ওজন কমানোর জন্য সহায়তা করতে পারে।
- হজমে সহায়ক: আদা চা, পুদিনা চা, অন্যান্য প্রাকৃতিক চায়ে থাকা উপাদানগুলো হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে থাকে। এসব চেয়ে থাকা এন্টি ইনফ্লিমেটরি উপাদান গুলো পেটের সমস্যাগুলো যেমন গ্যাস, এসিডিটি বা অজীর্ণের মতো সমস্যাগুলো কমাতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া, চা খাওয়া পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে এবং খাবারের পর হজমে সহায়তা করে ভূমিকা পালন করে।
- মানসিক চাপ কমানো: চায়ের মধ্যে থাকা নামক অ্যামিনো এসিড মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে এবং মনকে শান্ত রাখে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের একটি স্নিগ্ধ প্রভাব ফেলে, যার ফলে উদ্বেগ বা অস্থিরতা কমে যায়। তাই, চা খাওয়া একটি শান্তিপূর্ণ মুহূর্ত সৃষ্টি করতে সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি শিথিল করনে সহায়তা করে।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: ক্যাফিন এবং থিয়ানিনের সংমিশ্রণ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। চা খাওয়ার ফলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উন্নত হতে পারে, যা কাজের দক্ষতা বাড়ায় এবং তীক্ষ্ণ মনোযোগ বজায় রাখতে করে। এই কারণে অনেক মানুষ কাজের মাঝে চা পান করতে তাদের মনোযোগ বজায় রাখে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো: চায়ের মধ্যে উপস্থিত কিছু উপাদান যেমন পলিফেনলস ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। বিশেষ করে সবুজ চা নিয়মিত পান করলে রক্তে শর্করা মাথায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।
- দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক: চায়ের মধ্যে থাকা ফলুরাইড দাঁতের এনামেল (দাঁতের বাইরের আবরণ) শক্তিশালী করতে সহায়তা করে থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, চা দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। তবে অতিরিক্ত চিনি মেশানো চা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: চায়ে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট গুলো ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করতে সহায়তা করতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত চা পানে স্তন ক্যান্সার, মলাশয়ের ক্যান্সার এবং রক্তের ক্যান্সারের (লিউকেমিয়া) ঝুঁকি কিছুটা কমে যেতে পারে।
- পানি শূন্যতার প্রতিরোধ: চায়ে পানি রয়েছে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে গরম চা ঠান্ডা শীতল অবস্থায় শরীরকে তাজা রাখতে পারে এবং শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
চা খাওয়ার অপকারিতা সমূহ
চা খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে, তবে অতিরিক্ত চা খাওয়া বা
কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে চা খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চলুন আলোচনা করা
যাক চা খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে।
- অতিরিক্ত ক্যাফিনের প্রভাব: চায়ের মধ্যে ক্যাফিন থাকে, যা অল্প পরিমাণে মানসিক সতর্কতা বাড়ানোর জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত ক্যাফিন খাওয়া শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি) এবং উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। দিনে ৩-৪ কাপ চা খাওয়া সাধারণত নিরাপদ, তবে তার বেশি খেলে ক্যাফিনের প্রভাব বাড়তে পারে।
- হজমের সমস্যা: চা বিশেষ করে খালি পেটে খাওয়া হলে হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। চায়ের ট্যানিনস (তদন্তযোগ্য উপাদান) এসিডিটি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে, যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, চেয়ে থাকা কেফিন পেটে এসিডের উৎপাদন বাড়ায়, যা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- আয়রন শোষণে বাধা: চাই উপস্থিত ট্যানিন (যা চায় রং দেয়) শরীরের আয়রন শোষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করতে পারে। যাদের শরীরে আয়রনের অভাব রয়েছে, তারা যদি চা পান করেন, তবে তারা তাদের আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, ফলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা: চা রাতের বেলা খাওয়া ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি তার বেশি ক্যাফিন যুক্ত হয়। ক্যাফিন স্নায়ু উত্তেজিত করে, যা ঘুমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রাতে চা পান করার পরামর্শ দেওয়া হয় না, বিশেষত যদি আপনি সহজে ঘুমাতে না পারেন।
- দাঁতের ক্ষতি: চায়ের মধ্যে ট্যানিন ও ক্যাফিনের উপস্থিতি দাঁতে দাগ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে চা খেলে। এছাড়া, চায়ের মধ্যে থাকা এসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে, যা দাঁতের ক্ষতি বা সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- পানি শূন্যতা: চা খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে, কারণ ক্যাফিন একটি ডিউরেটিক, অর্থাৎ এটি মুত্রের উৎপাদন বাড়ায়। অতিরিক্ত চা পান করলে শরীরে পানির ঘাটের সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত যদি পানি বা অন্যান্য তরল পান না করা হয়।
- অতিরিক্ত চা খেলে গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। ক্যাফিন গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এটি গর্ভপাত, প্রি-ম্যাচিউর বাথ্, বা জন্মগত রুটি সৃষ্টি করতে পারে, তাই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য চা খাওয়ার পরিমাণ রাখা উচিত।
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার ঘাটতি: চা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু মানুষের রক্তে শর্করা মাত্রা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চায়ে অতিরিক্ত চিনি মেশালে এটি রক্তের শর্করা মাত্র বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
চায়ের সাথে কি কি খেলে শরীরের ক্ষতি
এখন চায়ের কিছু অসুবিধা রয়েছে, বিশেষ করে যদি আপনি এটি কিছু খাবারের সাথে
একত্রে খেয়ে থাকেন। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু খাবারের কথা বলা হলো যেগুলোর সাথে চা
পান করা সূর্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আলোচনা করা যাক চায়ের সাথে কি কি
মিশিয়ে খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
- চিপস: চায়ের সঙ্গে চিপসের যুগলবন্দি বড় উপাদেয়। কিন্তু এই দুই খাবার একসঙ্গে খেলে পেটের গোলমাল হতে পারে। চিপসের নুন এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশী। ফলে সঙ্গে সঙ্গে চা খেলে বদহজম হয়ে যেতে পারে।
- পকোড়া: শীতের সন্ধ্যায় গরম চায় সঙ্গে পকোড়ার জুটি নিঃসন্দেহে মন ভালো করা। তবে ডোবা তেলে ভাজা পোকোড়া চায়ের সঙ্গে গেলে অম্বল হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। পকোড়ায় ক্যালরির পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তেল থাকায় পকোড়া আর চা একসঙ্গে খেলেই বিপদ।
- কাপ কেক: চায়ের সঙ্গে কেক খেতেও পছন্দ করেন অনেকে। তবে কে কে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে মাখন, ময়দাও। এই প্রতিটি উপকরণ চার সঙ্গে শরীরে গেলে অসুস্থ শুরু হতে পারে। তাছাড়া ক্যালরি ও জমে শরীরে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: চায়ের সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কমলা বা লেবু, খাওয়া শরীরে কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চায়ের ট্যানিন ভিটামিন সি শোষণ করতে বাধা দেয়, যার ফলে শরীরে ভিটামিন সি এর প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ হতে পারে না।
শেষ কথা:চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
চা একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, তবে এটিকে সঠিকভাবে উপভোগ করা উচিত। চায় স্বাস্থ্য
উপকারিতা অসীম হলেও কিছু খাবারের সাথে এর মিশ্রণটি শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই
চা পান করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখা
উচিত।
আমার এই ব্লগটি পড়ে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত জনদের মাঝে
শেয়ার করুন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url